Bagdhara Bangla grammar part 2

 

Bangla grammar part -2

প্রতিটি ভাষায় এমন বহু শব্দ বা বাক্যাংশ আছে, যার মধ্যে অর্থগত বা ব্যবহারগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ভাষার এই জাতীয় বৈশিষ্ট্যকে বলে বাগধারা (Fiddling) বা বাগবিধি (Buggy)। বাংলা ভাষাতেও বহু বাগধারা আছে। নিচে কিছু বাগধারার উদাহরণ দেওয়া হলো :

অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া): প্রায় বছরখানেক ভুগে কাল রাতে রহিম সাহেব অক্কা পেয়েছেন।

অকাল কুষ্মান্ড (অকর্মণ্য): ছেলেটি বড়ই অকাল কুষ্মান্ড। ওকে দিয়ে কোন কাজ হবে না।

অতিদর্পে হত লঙ্কা (বেশি অহংকারে পতন): লোকটি ঘুষ, জুয়াচুরি করে টাকা বাজিয়ে কথা বলে, এখন কেমন ফল ফলল, অতি দর্পে হত লঙ্কা।

অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন): বৃদ্ধা জননীর অন্ধের যষ্টির মত পুত্রটি অকালে প্রাণ হারাল।

অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া (না জেনে কিছু করা): অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে যথাস্থানে পাটকেল নিক্ষেপ করাই বাঞ্ছনীয়।

অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন): তার নিকট এ বিষয়ে তোষামোদ করা আর অরণ্যে রোদন করা একই কথা।

অগস্ত্য যাত্রা (শেষ প্রস্থান): শ্বশুরের সাথে ঝগড়া করে জামাতা একেবারে অগস্ত্য যাত্রা করল।

অহি-নকুল সম্বন্ধ (চিরশত্রুতা): চাচা-ভাইপোর মধ্যে একেবারে অহি-নকুল সম্বন্ধ; সামান্য ব্যাপার নিয়ে কতবার যে লড়াই হয়ে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই।

অষ্টবজ্য সম্মিলন (প্রতিভাবান ব্যক্তিদের একত্র সমাবেশ): মওলানা আকরাম খাঁর লোকসভায় বাংলা সাহিত্যের অষ্টবজ্র সম্মিলন হয়েছিল।

অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (অল্প বিদ্যার গর্ব): অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বলেই অর্বাচনী জব্বার মিয়য়া বাংলাদেশের সেরা বৈজ্ঞানিক ড. কুদরত-ই-খুদার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সমালোচনায় অগ্রসর হল।

অগাধ জলের মাছ (অত্যন্ত কৌশলী): কথাবার্তা সাদাসিধে হলেও লোকটি অগাধ জলের মাছ; ওর প্রকৃত পরিচয় পেতে একটু দেরী হবে।

অমাবস্যার চাঁদ (অদর্শনীয়): কি ভাই সাবের। তুমি যে একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠলে; কতদিন তোমাকে দেখি না।

অর্ধচন্দ্র গান (গলাধাক্কা দেওয়া): চোরটার মায়াকান্নায় কর্ণপাত করো না; বেশ করে অর্ধচন্দ্র দান করে বিদায় কর।

অগ্নিশর্মা হওয়া (অত্যন্ত রাগান্বিত হওয়া): সাহেব বড় বদমেজাজী, তাঁর কথার উপর কথা বলতেই তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন।

অন্তর টিপুনি (মর্মপীড়াদায়ক): তোমার কথা শুনলে গা-জ্বালা করে, প্রত্যেক কথাতেই অন্তর টিপুনি দিতে ওস্তাদ।

অগ্নি পরীক্ষা (চরম পরীক্ষা): বাঙালি জাতি চরম অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে জয়লাভ করেছে।

অকূলে কূল পাওয়া (নিরুপায় অবস্থা হতে উদ্ধার পাওয়া): এই ঘোরতর দুর্দিনে তোমার সাহায্য পেয়ে যেন অকূলে কূল পেলাম।

অকূল পাথার (মহাবিপদ): অকূল পাথারে খোদা তুমিই আমার ভরসা।

অনুরোধে ঢেঁকি গেলা (অসম্ভব কার্য সম্পাদন করা): কাটা খুবই কঠিন, কিন্তু এখন অধ্যক্ষের অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হচ্ছে।

অন্ধকার দেখা (বিপদে পড়ে ভয় ও ভাবনায় আকুল হওয়া): পিতৃমাতৃহীন আকবর দেনার দায়ে দুই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল।

অন্ধকারে থাকা (কোন বিষয়ে অনভিক্ষ থাকা): আমি তো সব সময়ই অন্ধকারে থাকলাম, অথচ কি দোষে আমাকে দোষী করছ।

আকাশ-কুসুম (অসম্ভব কল্পনা): বসে বসে আকাশ-কুসুম ভেব না, কাজ কর।

আক্কেল সেলামী (বোকামির শাস্তি): বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে তার দশ টাকা আক্কেল সেলামী দিতে হল।

আকাশ-পাতাল (ব্যবধানে বিশালতা): কিসে আর কিসে তুলনা করেছ ভাই। উভয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।

আক্কেল গুড় (বুদ্ধি লোপ): কালকের ছেলে মতি, সে তোমার টাকা কেড়ে নিল, শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ম।

আঙ্গুল ফুলে কলা চাছ (হঠাৎ ধনী হওয়া): হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে নেই।

আদায় কাঁচকলায় (ঘোর শত্রুতা): খালিদ ও রফিকের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই; উভয়ের সম্পর্কটা একেবারে আদায় কাঁচকলায়।

আঁধার ঘরের মানিক (প্রিয়বস্তু): একমাত্র পুত্রটি ছিল বিধবা মাতার আঁধার ঘরের মালিক, সে-ও এমনি মাকে ফাঁকি দিল।

আদিখ্যেতা (ন্যাকামি): আদিখ্যেতা করিসনে বাপু, আমাকে এখনই ট্রেন ধরতে হবে, তোর আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে।

আদার বেপারী (সামান্য বিষয়ে ব্যস্ত ব্যক্তি): কিহে, তুমি আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নিতে চাও? লাভ কিছুই হবে না।

আধা খেঁচড়া (বিশৃঙ্খলা): যা করবে বাপু ভাল করে করো, আধা খেঁচড়া করো না।

আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ): রহিম ভাই অযোগ্য, তার মত আমড়া কাঠের ঢেঁকি দিয়ে কাজ হবে না।

আসমান-জমিন ফারাক (অনেক প্রভেদ): বিদেশের তৈরি জিনিসের সঙ্গে আমাদের তৈরি জিনিসের আসমান-জমিন ফারাক।

আষাঢ়ে গল্প (গাঁজাখুরে): আজ বৃষ্টির দিনে ভাই আষাঢ়ে গল্প না হলে ভাল কাটে না।

আহলাদে আটখানা (অত্যন্ত খুশি): প্রাইজবন্ডে হাজার টাকা পেয়ে আহলাদে আটখানা হয়েছ দেখছি।

আসর গরম করা (সভাজনদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি): যাকে বলে আসর গরম করা বক্তৃতা, তাই দিয়ে সভাপতি সাহেব সকলকে মাতিয়ে তুললেন।

আসলে মুষল নেই, ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া (ঠিকমত ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব): নিজের সংসারে নজর নেই, উনি গেছেন বন্ধুর সংসার আগলাতে আসলে মুষল নেই, ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া।

আকাশে তোলা (অতিরিক্ত প্রশংসা করা): এসব বলে বাবাজীকে আকাশে তুল না, তাহলে লেখাপড়া ভেস্তে যাবে।

আসরে নামা (আবির্ভূত হওয়া): এতক্ষণ একটি কথাও বলেনি, এখন আসরে নেমে গেল।

আদা-জল খেয়ে লাগা (কোমর বেঁধে লাগা): আনোয়ার গতবার পরীক্ষা ভাল করেনি তাই এবার আদা-জল খেয়ে পড়তে লেগেছে।

আঁতে ঘা (মনে ব্যথা দেওয়া): দিপু তোমার আঁতে ঘা দিয়ে কথা বলেছে, তুমি কাপুরুষ বলে এখনো চুপ করে রয়েছ?

আগুন লাগা সংসার (নষ্ট হচ্ছে এমন সংসার): তোমার এই আগুন লাগা সংসারে উন্নতি হবে কি করে বলত?

আপন পায়ে কুড়োল মারা (নিজের অনিষ্ট করা): কুসংসর্গে মিশে তুমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়োল মারছ।

আলালের ঘরের দুলাল (ধনীর সযতেœ লালিত সন্তান): তুমি হচ্ছ আলালের ঘরের দুলাল, এত কষ্ট করে হোটেলে থাকতে পারবে না।

আকাশ থেকে পড়া (না জানার ভান করে বিস্ময় প্রকাশ করা): ওহে ছেলের ফেলের কথা শুনে তুমি আকাশ থেকে পড়লে যে।

আড়িপাতা (লুকিয়ে শুনা): বউ আড়ি পেতে শ্বশুর-শাশুড়ির সব কথা স্বামীর কানে লাগাল।

আঠার মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রিতা): তুমি একটি কুড়ের বাদশাহ তোমার আঠার মাসে বছর, তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না।

আমড়াগাছি করা (তোষামোদের বাড়াবাড়ি করা): চতুর ব্যক্তিরা নির্বোধ ধনী লোককে আমড়াগাছি করে নিজেদের কাজ হাসিল করে।

আসরে নামা (কাজে অবতীর্ণ হওয়া): ওহে, আসরে যখন নামইেত হবে তখন ঘোমটা দিলে কি চলে।

ইঁদুর কপালে (মন্দ ভাগ্য): ওরে হাফিজ, তুই ইঁদুর কপালে। একের পর এক তোর সবাই মরে গেল।

ইতর বিশেষ (প্রভেদ বা পার্থক্য): কাজী সাহেব নিজের ছেলে, আর ভাইয়ের ছেলের মধ্যে কোনরূপ ইতর বিশেষ না করে একরকম পোশাক দিতেন।

ইঁচড়ে পাকা (অকাল পক্ব): শহরে অনেক ছেলে খারাপ সঙ্গ লাভে ইঁচড়ে পেকে যায়, তাদের সঙ্গে চলতে নেই।

ঈদের চাঁদ (আকাক্সিক্ষত বস্তু): বিদেশ থেকে ছেলে ফিরে এলে বাবা-মা যেন ঈদের চাঁদ ফিরে পেলেন।

উত্তম-মধ্যম (প্রহার): চোরটাকে ভাল রকম উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উড়নচন্ডী (অমিতব্যয়ী): উড়নচন্ডী হয়ে আর কতদিন বাপের হোটেলে কাটাবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা কর।

উভয় সংকট (দুই দিকের বিপদ): অফিসার সাহেবের কথা রক্ষা করলেই সত্যের খেলাপ হয় আর না করলে চাকরি রাখা কঠিন: আমার হয়েছে উভয় সঙ্কট।

উড়ো চিঠি (ভিত্তিহীন পত্র বা সংবাদ): আরে বাপু এত ভীত হয়েছ কেন, এত উড়ো চিঠি, নাম নেই, ঠিকানা নেই।

উড়ে এসে জুড়ে বসা (অযাচিতভাবে এসে সর্বেসর্বা হওয়া): জীবনে যাকে দেখিনি সেই মেজ জা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন সংসারে।

উলুবনে মুক্তা ছড়ানো (অযোগ্য স্থানে মূল্যবান দ্রব্য রাখা): তোমার মত নির্বোধকে উপদেশ দেওয়া আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো এক কথা।

উপরোধে ঢেঁকি গেলা (অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু করা): লোকে উপরোধে ঢেঁকি গেলে, আর তুমি আমার সামান্য অনুরোধটি রাখবে না?

ঊনপঞ্চাশ বায়ু (পাগলামি): পরীক্ষা পরীক্ষা করতে করতে তার ঊনপঞ্চাশ বায়ু প্রবল হয়েছে; পরীক্ষা শেষ হলেই বাঁচি।

ঊনপাঁজুরে (মন্দভাগ্য): ঊনপাঁজুরে মেয়ের কোন আশা নেই।

এলাহি কান্ড (রাজকীয় বা খুব বড় রকমের): আরে মজিদ তোমাদের বাড়িতে এত হৈ চৈ কিসের? সব দেখছি এলাহি কান্ড।

একাদশে বৃহস্পতি (সুসময়): যেমন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে মুন্সেফী চাকরি-তোমার এখন একাদশে বৃহস্পতি ভাই।

এলোপাথাড়ি (বিশৃঙ্খলা): গৃহস্বামীর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে ডাকাতদল পলায়ন করল।

এক হাত লওয়া (প্রতিশোধ): বড় সাহেবের পিছনে আর লাগবে? কেমন সে এক হাত নিয়েছে।

একচোখা (পক্ষপাত): সেলিম চৌধুরীর মত এমন একচোখা মানুষ আমি আর দেখিনি। নিজের ছেলেদের কোন দোষ তাঁর চোখে পড়ে না, যত দোষ সব ভাইয়ের ছেলেদের।

এক ঢিলে দুই পাখি মারা (এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন করা): চল, মেলাও দেখব, সওদাও করব-এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।

এক ক্ষুরে মাথা মুড়ান (একই অবস্থা বা স্বভাববিশিষ্ট): যেমন বড় ভাই তেমনি ছোট ভাই, উভয়েই এক ক্ষুরে মাথা মুড়ান; টাকার জন্য এরা করতে পারে না এমন কাজ জগতে নেই।

এসপার উসপার (মীমাংসা): আর চিন্তা করো না, হয় কাজে যোগদান কর না হয় ছাড়, একটা এসপার উসপার করে ফেল।

একা ঘরের গিন্নি (কর্তৃত্ব): তোমার ত এখন কেউ নেই রহিমা, শুধু তোমার বুড়া বাপ তুমি ত এখন একা ঘরের গিন্নি।

এক মাঝে শীত যায় না (পুনরায় বিপদ ঘটার সম্ভাবনা): আমার টাকা কয়টা নিয়ে দেখা নেই; আচ্ছা দেখা যাবে এক মাঘে শীত যায় না।

ওজন বুঝে চলা (আত্মমর্যাদা রক্ষা): আজকাল দিনকাল খারাপ, ওজন বুঝে চল, নইলে অপমানিত হবে।

ওষুধ করা (তুক করা): নিশ্চয় কোন ছোটলোক তাকে ওষুধ করেছে; নইলে তার মুখে রা নেই কেন?

ওষুধ ধরা (আকাক্সিক্ষত ফল লাভ): বড় বাবুর তিরস্কারে আবুল পড়াশুনায় মন দিয়েছে। ওষুধ ধরেছে নিশ্চয়।

ওষুধ পড়া (প্রভাবে পড়া): এবার ওষুধ পড়েছে, পড়াশুনা করছে।

No comments

Theme images by sndrk. Powered by Blogger.